শুক্রবার, ০১ অগাস্ট ২০২৫, ০৪:০৩ পূর্বাহ্ন
নরসিংদী প্রতিনিধি, ই-কণ্ঠ টোয়েন্টিফোর ডটকম ॥ নরসিংদীর রায়পুরায় এক কৃষকের বাড়ির একটি ঘরে চলতি শিক্ষাবর্ষের হাজারেরও বেশি পাঠ্যপুস্তক পাওয়া গেছে। চলতি শিক্ষাবর্ষের বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীদের এসব পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে বিতরণের পর বিদ্যালয়ে থাকার কথা বা অতিরিক্ত হলে ফেরত পাঠানোর কথা।
একজন কৃষকের বাড়িতে পাঠ্যপুস্তকগুলো পড়ে থাকায় স্থানীয়দের ধারণা, একটি অসাধু চক্র বইগুলো চুরি করে অবৈধভাবে বিক্রির জন্য লুকিয়ে রেখেছিল।
যে কৃষকের বাড়িতে এসব বই পাওয়া গেছে তার নাম বকুল মিয়া (৫৫)। তিনি রায়পুরার মরজালের চারাবাগ এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা। তার বাড়ির সদস্যরা জানায়, এসব বই চারাবাগ আইডিয়াল হাইস্কুল নামের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের। স্কুলটির পেছনেই ওই কৃষকের বাড়ি।
স্থানীয় সূত্রে খবর পেয়ে সরেজমিনে গিয়ে ওই বাড়িটিতে দেখা যায়, কৃষক বকুল মিয়ার বাড়ির একটি ঘরে বিপুল সংখ্যক পাঠ্যপুস্তক বাধা অবস্থায় পড়ে আছে। বইগুলো চলতি শিক্ষাবর্ষের মাধ্যমিক শাখার বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য ছাপানো হয়েছিল। যে কক্ষে পাঠ্যপুস্তকগুলো পড়ে ছিল, তার অবস্থান বাড়িটির গোয়ালঘর ও রান্নাঘরের মাঝখানে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, স্কুল কর্তৃপক্ষ ও কৃষকের মধ্যে সুসম্পর্ক থাকায় এবং স্কুলের পেছনেই কৃষকের বাড়ি হওয়ায় এসব পাঠ্যপুস্তক অবৈধভাবে বিক্রির উদ্দেশ্যে সেখানে রাখা হয়েছে।
বইয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষক বকুল মিয়া বলেন, এই পাঠ্যপুস্তকগুলো চারাবাগ আইডিয়াল হাইস্কুলের। প্রায় দুই মাস আগে স্কুলটির দপ্তরি জাহাঙ্গীর মিয়া আমার বাড়িতে এসে এগুলো রেখে যান। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন স্যারের কথা বলায় আমি বইগুলো রাখতে দিয়েছি। এরপর থেকে আর বইগুলো নেওয়ার নাম নেই তাদের। এছাড়া বইগুলো কেন আমার এখানে রাখা হয়েছে, এই বিষয়েও আমি কিছু জানি না।
বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন ট্রেনিংয়ের কারণে জেলার বাইরে আছেন। আর বর্তমানে যিনি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে আছেন তিনিও টিফিনের বিরতিতে বিদ্যালয়ের বাইরে ছিলেন।
পরে খবর পেয়ে তিনি বিদ্যালয়ে আসেন। এ সময় কথা বলতে এগিয়ে আসেন ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সদস্য মো. মোছলেহ উদ্দিন ও সাবেক অভিভাবক সদস্য আবুল বাশার। তারা জানান, পাঠ্যপুস্তকের বিষয়ে তারা কিছু জানেন না। তবে এই স্কুলে কোন অনিয়ম নেই।
এই বিষয়ে জানতে গতকাল এবং আজ (শুক্রবার) কয়েকবার ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেনের মুঠোফোনে কল দিলেও তিনি ধরেননি। এছাড়া দপ্তরি জাহাঙ্গীরকে গতকাল স্কুলে গিয়ে পাওয়া যায়নি। তার মুঠোফোনও বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থাকা মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, আমাদের চাহিদা অনুযায়ী সে পরিমাণ বই পাঠানো হয়েছিল, সেই পরিমাণ বই সব শিক্ষার্থীর মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। পাশের কক্ষে কিছু নষ্ট বই ছাড়া আমাদের কাছে অতিরিক্ত কোন বই নেই। কৃষকের বাড়িতে পড়ে থাকা পাঠ্যপুস্তকের বিষয়ে আমরা কিছু জানি না।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা যায়, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে প্রতিটি বিদ্যালয়ে কী পরিমাণ বই লাগবে তার একটা চাহিদা নিরূপণ করা হয়। তবে চাহিদাপত্রে আগের বছরের তুলনায় ৫ শতাংশ বই বেশি চাহিদা দেওয়া হয়। নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে বইগুলো পৌঁছানোর পর থেকে বিদ্যালয়গুলোতে বিতরণ করা হয়।
তবে চাহিদা অনুযায়ী বই বিতরণ করা হলেও শর্ত থাকে যে, উদ্বৃত্ত বা অতিরিক্ত থাকা বই অন্যান্য বিদ্যালয়ের মাঝে সমন্বয় করতে হবে। এক্ষেত্রে একটি রেজিস্টার মেইনটেইন করা হয়, সেখানে শিক্ষার্থীরা স্বাক্ষর দিয়ে তাদের বই সংগ্রহ করে। এর মাধ্যমে জানা যায় কতগুলো বই ওই বিদ্যালয়ে উদ্বৃত্ত থাকলে। ফেব্রুয়ারির পরপরই এসব উদ্বৃত্ত বা অতিরিক্ত বই বিদ্যালয়গুলো থেকে সংগ্রহ করা হয়।
এ বিষয়ে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার গৌতম চন্দ্র মিত্র বলেন, কৃষকের ঘরে বিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দ পাঠ্যপুস্তক পড়ে থাকার বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। চলতি শিক্ষাবর্ষের এতগুলো বই কোন বিদ্যালয়ে বা অন্য কোথাও থাকার নিয়ম নেই, সে সুযোগও নেই। আমি এরই মধ্যে রায়পুরা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে বিষয়টি সরেজমিনে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছি। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।